Skip to main content
তাই, নামাজিরা ধ্বংস হয়ে যাক সর্বনাশ! নামাজিরা ধ্বংস হয়ে যাবে? তাও আবার ‘ওয়াইল’ ويل এর মত ভয়াবহ শব্দ, যার অর্থ হচ্ছে নিদারুণ দুর্দশা, কষ্ট, বিপদ আছড়ে পড়া? এই আয়াতে আল্লাহ تعالى অভিশাপ দিচ্ছেন যে, যারা নিয়মিত নামাজ পড়ে, কিন্তু এতিমদের তাড়িয়ে দেয়, অভাবীদের খাবার দেয় না, মানুষকে দিতে উৎসাহও দেয় না, তারা ধ্বংস হয়ে যাক। এখানেই আয়াত শেষ করে দেওয়ার মধ্যে আমাদের শেখার ব্যাপার রয়েছে। এই কথা শুনে যেন নামাজিরা চমকে ওঠে, “কী! নামাজিরা ধ্বংস হয়ে যাবে? সর্বনাশ, আল্লাহ কী বলছেন!” এই বিরতির অর্থ হচ্ছে, এর আগে আল্লাহ تعالى যা বলেছেন, তার সাথে এই অভিশাপ জড়িত এবং এরপরে আল্লাহ تعالى যা বলবেন, তার সাথেও জড়িত। অর্থাৎ আমরা দুই ধরনের মানুষের কথা জানতে পারবো, যাদেরকে আল্লাহ تعالى ধ্বংস করে দেবেন বলে অভিশাপ দিয়েছেন।[১] যারা নামাজের ব্যাপারে খামখেয়ালী আল্লাহ تعالى যদি বলতেন, এরা নামাজের ‘মধ্যে’ খামখেয়ালী তাহলে আমরা সবাই শেষ হয়ে যেতাম, কারণ আমাদের নামাজগুলোর বেশিরভাগই হচ্ছে দায়সারা দায়িত্ব পালন করা। আর আমরা যখন নামাজে দাঁড়াই, তখন আমাদের মনের ভেতরে যে চিন্তাগুলো চলতে থাকে, সেটাকে যদি কথায় প্রকাশ করা যায়, তাহলে তা দেখতে হবে অনেকটা এরকম— আলহামদু লিল্লাহি … দেশের কী অবস্থা, চারিদিকে মারামারি, খুনাখুনি, অজ্ঞান পার্টি … মালিকি ইয়াওমিদ্দিন … আহ্ হা, গতকালকে পরীক্ষায় তিন নম্বর প্রশ্নের উত্তর তো ভুল লিখে এসেছি … ইয়াকা নাবুদু ওয়া ইয়াকা … ♫ মোরা একটি দেশকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি ♫ … কুল হু আল্লাহু আহাদ … আজকে মুরগি আর সবজি করতে বলতে হবে … সামি’ আল্লাহু লিমান হামিদাহ … ওহ্ হো! চার রাকআতের জায়গায় তো তিন রাকআত পড়ে বসে পড়েছি, যাকগে কিছু হবে না … আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ … ওযু করেছিলাম? … আমাদের বেশিরভাগেরই নামাজ পড়তে দাঁড়ালে এমন কোনো দুনিয়ার চিন্তা নেই, যেটা আসে না। একজন একাউন্টেন্ট তার কঠিন সব হিসাব নামাজে দাঁড়িয়ে সমাধান করে ফেলেন। একজন প্রোগ্রামার তার প্রোগ্রামের বাগগুলো ঠিক করে ফেলেন নামাজে দাঁড়িয়ে। একজন ডাক্তার কীভাবে অপারেশন করবেন, তার রিহার্সাল করে ফেলেন নামাজে দাঁড়িয়ে। আর তারপরে আমরা ভাবি, “নামাজ পড়ে আমার তো কোনো লাভ হচ্ছে না? আমার ইসলাম সম্পর্কে আগ্রহ তো তেমন বাড়ছে না? এত বার নামাজে আল্লাহর تعالى কাছে চাচ্ছি, তাওতো কিছু পাচ্ছি না। নামাজ পড়ে আসলেই কী কোনো লাভ হয়?” পড়ো, যা তোমাকে এই কিতাবে প্রকাশ করা হয়েছে, নামাজ প্রতিষ্ঠা কর, নিশ্চয়ই নামাজ মানুষকে অশ্লীল এবং অন্যায় কাজ থেকে দূরে রাখে… [আনকাবুত ২৯:৪৫] নামাজ মানুষকে অশ্লীল কাজ এবং অন্যায় কাজ থেকে দূরে রাখবে —এই গ্যারান্টি আল্লাহ تعالى আমাদেরকে দিয়েছেন। এখন নামাজ পড়ে আমরা যদি অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকতে না পারি, অন্যায় ��াজ করা বন্ধ করতে না পারি—তাহলে আমরা যা করছি, সেটা কি সত্যিই নামাজ, নাকি শুধুই কার্ডিও-ভাস্কুলার এক্সারসাইজ, সেটা ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখা দরকার। এই আয়াতে আল্লাহ تعالى বলছেন যে, এরা নামাজের ব্যাপারে খামখেয়ালী। আসর ওয়াক্ত প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু ওদিকে টিভিতে সিরিয়ালে টানটান উত্তেজনা চলছে। ভাবছি, “এইতো, আর কিছুক্ষণ পরেই সিরিয়াল শেষ হয়ে যাবে। মাগরিবের সাথে পড়ে নেবো।” মেহমান এসেছে। তুমুল আড্ডা চলছে। ওদিকে মাগরিবের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাচ্ছে। ভাবছি, “এখন উঠে চলে গেলে সবাই আবার কী মনে করে। তারচেয়ে ঈশা’র সাথে পড়ে নেবো।” —এগুলো হচ্ছে নামাজের ব্যাপারে খামখেয়ালী। যারা নামাজের ব্যাপারে এরকম খামখেয়ালী, তারা আল্লাহর تعالى সাথে তাদের সম্পর্ককে কোনো গুরুত্ব দেয় না। তাদের কাছে আল্লাহর تعالى গুরুত্ব টিভির থেকে কম। আল্লাহর تعالى সম্মান মেহমানদের থেকেও নীচে। অফিসের বসকে তারা ভয় পায়, কিন্তু আল্লাহকে تعالى ভয় পায় না। এইসব চরম অকৃতজ্ঞ, বেয়াদপ মানুষদের আল্লাহ تعالى বলছেন যে, এরা ধ্বংস হয়ে যাক। আল্লাহ تعالى তাদেরকে সব দেন, আর তারা তাঁর تعالى সাথেই এরকম করার দুঃসাহস দেখায়। আল্লাহ تعالى আমাদের কুর‘আনে একবার, দুইবার, দশবার, বিশবার নয়, কমপক্ষে একাশি বার বলেছেন নামাজ প্রতিষ্ঠা করতে। আক্বিমুসসালাহ অর্থ শুধুই নামাজ পড়া নয়। বরং নামাজ প্রতিষ্ঠা করা। আক্বিমু অর্থ দাঁড় করাও। প্রাচীন আরবরা যখন কোনো শক্ত পিলার স্থাপন করতো, বা শক্ত দেওয়াল তৈরি করতো, তার জন্য তারা কু’মু শব্দটি ব্যবহার করতো। এখানে কু’মু ব্যবহার করে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে বলছেন যে, আমাদের প্রতিদিনের রুটিনের মধ্যে পাঁচটি শক্ত পিলার দাঁড় করাতে হবে। সেই পিলারগুলো কোনোভাবেই নড়ানো যাবে না। আমাদের পড়ালেখা, কাজ, খাওয়া, বিনোদন, ঘুম সবকিছু এই পিলারগুলোর আশেপাশে দিয়ে যাবে। আ���াদের দৈনন্দিন রুটিনে নামাজ তার জায়গায় শক্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে, কোনোভাবেই তাদেরকে নড়ানো যাবে না।[১] যারা লোক দেখিয়ে করে এরা নামাজ পড়ার সময় নিশ্চিত করে যে, আশেপাশের মানুষ যেন দেখে সে কত লম্বা সময় সিজদা দিচ্ছে। মানুষকে শুনিয়ে মুনাজাতে নাকের পানি টানে। একটু পর পর রুমাল বের করে চোখ মুছে আড়চোখে দেখে কেউ দেখছে কিনা। এদের নামাজ হচ্ছে লোক দেখানো। আল্লাহর تعالى প্রতি তারা এতটাই বেয়াদপ যে, নামাজ যাওবা পড়ে, সেই নামাজ হয়ে যায় লোক দেখানো। এই চরম অকৃতজ্ঞ মানুষদের আল্লাহ تعالى শেষ করে দেবেন। কঠিন কষ্ট অপেক্ষা করছে এদের জন্য।
Popular posts from this blog
Comments
Post a Comment